ভোক্তা প্রযুক্তি এবং ডীপটেক উদ্ভাবন: ভারতের স্টার্টআপ বাস্তুতন্ত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক
ভারতের স্টার্টআপ বাস্তুতন্ত্র নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের মন্তব্যগুলি নিয়ে একটি উজ্জীবিত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। গয়াল, স্টার্টআপ মহাকুম্ভ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় সংস্করণে বক্তব্য রাখার সময়, ভারতের স্টার্টআপদেরকে শুধুমাত্র ভোক্তা প্রযুক্তির উপর ফোকাস না করে, ডীপটেক উদ্ভাবনে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। তার মন্তব্যগুলিতে সেমিকন্ডাক্টর, রোবটিক্স এবং ইলেকট্রিক যানবাহন (ইভি) এর মতো অত্যাধুনিক ক্ষেত্রগুলিতে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা অনেক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতা এবং বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শক্ত প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। তারা মনে করেন যে, ভোক্তা প্রযুক্তি দেশের উদ্ভাবন এবং সম্পদ সৃষ্টির একটি অপরিহার্য চালক, এবং সরকারকে এই খাতকে আরও সক্রিয়ভাবে সমর্থন করার প্রয়োজন।
এই বিতর্কটি ভারতের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ভবিষ্যৎ, ভোক্তা ইন্টারনেট কোম্পানির ভূমিকা এবং কোন ধরনের সমর্থন সরকারকে উভয় ডীপটেক এবং ভোক্তা প্রযুক্তি উদ্যোগের বিকাশের জন্য প্রদান করা উচিত, এ সম্পর্কে আরও বিস্তৃত আলোচনার পথ খুলে দিয়েছে।
ভোক্তা প্রযুক্তি স্টার্টআপের উদ্ভাবনে ভূমিকা
গয়ালের সমালোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্তর দিয়েছেন আদিত্য পলিচা, যিনি জেপটো নামে একটি দ্রুততর মুদি ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও। একটি লিঙ্কডইন পোস্টে পলিচা উল্লেখ করেন যে, গত দুই দশকে প্রযুক্তি-চালিত উদ্ভাবন বেশিরভাগই ভোক্তা ইন্টারনেট স্টার্টআপগুলি থেকে এসেছে। তিনি প্রশ্ন করেন, কেন ভারত নিজের মৌলিক এআই মডেল তৈরি করতে পারেনি, এই প্রশ্নটি তুলে ধরে যে, কারণ দেশ এখনও বৃহত্তর স্কেলের ইন্টারনেট কোম্পানি তৈরি করেনি। পলিচার মতে, দ্রুত বাণিজ্য, খাদ্য ডেলিভারি এবং ই-কমার্সের মতো খাতে কোম্পানিগুলি দেশের প্রযুক্তিগত দৃশ্যপট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এই কোম্পানিগুলির মাধ্যমে কেবল প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনই এসেছে না, বরং এগুলি ভারতের ভবিষ্যত শিল্প যেমন ডীপটেকের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করেছে। ভোক্তা প্রযুক্তি খাতে যা সম্ভব তা সীমাবদ্ধ করে, এই কোম্পানিগুলি এমন নতুন ধারণাগুলিকে উদ্ভাবন করতে বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ করে দিয়েছে, যা আরও উন্নত খাতে প্রযোজ্য।
রাজীব মন্ত্রি, নভাম ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠাতা এবং ব্যবস্থাপনা অংশীদার, সমর্থন জানিয়ে বলেন, ভোক্তা প্রযুক্তি ডীপটেকের পক্ষ থেকে ছোট করে দেখানো উচিত নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ভোক্তা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি শুধু চাকরি এবং সম্পদ তৈরি করেনি, বরং স্থানীয় চ্যাম্পিয়নদেরও তৈরি করেছে। এই স্থানীয় বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলি, যেমন ফ্লিপকার্ট, জোমাটো এবং সুইগি, প্রমাণ করেছে যে তারা লাভজনক এবং বিলিয়ন ডলার মুক্ত নগদ প্রবাহ তৈরি করতে সক্ষম। এই সফলতাগুলি পরবর্তীতে ডীপটেক সহ সীমান্ত প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের জন্য উ fertile জমি তৈরি করেছে।
স্টার্টআপ বাস্তুতন্ত্রের অনেকেই যুক্তি দেন যে, ভারতের আগে ইন্টারনেট ক্ষেত্রে শক্তিশালী স্থানীয় চ্যাম্পিয়ন তৈরি করা উচিত, তারপরে AI, সেমিকন্ডাক্টর এবং রোবোটিক্সের মতো খাতে সত্যিকারের অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব। শক্তিশালী এবং উদ্ভাবনী ইন্টারনেট কোম্পানি ছাড়া, ভারত ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগত বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ হারাতে পারে।
ফোকাসে পরিবর্তন: ডীপটেক বনাম ভোক্তা প্রযুক্তি
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল যে ভারতের স্টার্টআপদেরকে বড় স্বপ্ন দেখতে এবং ডীপটেক উদ্ভাবনের উপর মনোযোগ দিতে বলেছেন, এটি দেশের উদ্যোক্তা কাহিনীতে একটি পরিবর্তন হিসেবে দেখা হয়েছে। স্টার্টআপ মহাকুম্ভে তিনি প্রতিষ্ঠাতাদের দ্রুত বাণিজ্য, গেমিং এবং প্রভাবশালী অর্থনীতির মতো খাতগুলি অতিক্রম করার আহ্বান জানিয়েছিলেন, যেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিনিয়োগের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি ভারতীয় স্টার্টআপদেরকে বিশ্বমানের উদ্ভাবন করতে উৎসাহিত করেছেন, যেমন ইভি, রোবটিক্স এবং সেমিকন্ডাক্টর—এমন খাতে, যেখানে চীন যেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।
তবে, সমালোচকরা যুক্তি দেন যে, এই পরিবর্তন ভোক্তা প্রযুক্তির যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তা উপেক্ষা করে। যদিও ডীপটেকের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, এটি একটি অত্যন্ত পুঁজি-ভিত্তিক এবং দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ। তার বিপরীতে, ভোক্তা প্রযুক্তি দ্রুত স্কেলযোগ্যতা, চাকরি সৃষ্টি এবং স্বল্পমেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ সৃষ্টির সুযোগ দেয়।
এছাড়া, সরাসরি ডীপটেকের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়া, ভোক্তা প্রযুক্তি এড়িয়ে, একটি বাস্তবসম্মত উপায় হতে পারে না। গয়াল যেসব ডীপটেক উদ্ভাবনের কথা বলেছেন, সেগুলি অনেকটাই ভোক্তা ইন্টারনেট স্টার্টআপগুলি দ্বারা তৈরি করা ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। উদাহরণস্বরূপ, AI, মেশিন লার্নিং এবং ডেটা সায়েন্স—যা ডীপটেকের প্রধান সক্ষমকারী প্রযুক্তি—এগুলি ভোক্তা-মুখী কোম্পানিগুলির দ্বারা বিকাশিত ডেটা এবং পরিকাঠামো দ্বারা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
চীনের বিবর্তন থেকে শেখা
গয়াল তার মন্তব্যে ভারতীয় এবং চীনা স্টার্টআপগুলির মধ্যে তুলনা করেছেন, এদিকে তিনি উল্লেখ করেন যে, চীনের সফলতা ইভি, সেমিকন্ডাক্টর এবং রোবটিক্সের মতো ক্ষেত্রে তাদের প্রাথমিকভাবে ভোক্তা প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ দেওয়ার পর এসেছে, বিশেষ করে খাদ্য ডেলিভারি পরিষেবাগুলিতে। ভারতপে-এর প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক অশনীর গৌর এই তুলনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, চীনের প্রযুক্তি বাস্তুতন্ত্রের দীর্ঘদিনের শক্তিশালী সরকারি সমর্থন এবং নীতিগত হস্তক্ষেপ ছিল, যা তাদের ভোক্তা প্রযুক্তি থেকে ডীপটেকের দিকে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
গৌর যুক্তি দেন যে, ভারতকে আগামী দুই দশক ধরে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, যেমন চীন তাদের ট্র্যাজেক্টরি অনুসরণ করেছে। তিনি বলেন, চীন সরাসরি ডীপটেকের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েনি, বরং প্রথমে তাদের ভোক্তা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলিকে বেড়ে উঠতে সময় দিয়েছে, যা দেশটির পরবর্তী ডীপটেক সফলতার জন্য একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি করেছে।
গৌর আরও উল্লেখ করেন যে, ভারতের জনসমক্ষে অতীতের নস্টালজিয়া থেকে ভবিষ্যতের দিকে, বিশেষত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ স্থানান্তরিত করা প্রয়োজন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারতীয় উদ্যোক্তাদের ভোক্তা প্রযুক্তি এবং ডীপটেক উভয় ক্ষেত্রেই পরীক্ষা, উদ্ভাবন এবং ঝুঁকি নেওয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত, কোনো নিষেধাজ্ঞামূলক নীতির দ্বারা বাধাগ্রস্ত না হয়ে।
উদ্ভাবনের সমর্থনে সরকারের ভূমিকা
ভারতের প্রযুক্তি বাস্তুতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিতর্ক বাড়ার সঙ্গে, বিভিন্ন খাতে উদ্ভাবনকে আরও ভালভাবে সমর্থন করতে সরকারের হস্তক্ষেপের আহ্বান বাড়ছে, যেটি ভোক্তা প্রযুক্তি এবং ডীপটেক উভয় ক্ষেত্রকেই অন্তর্ভুক্ত করে। রাজীব মন্ত্রি ডীপটেক উদ্যোক্তাদের দ্বারা মুখোমুখি হওয়া বিশেষ চ্যালেঞ্জগুলি সমাধান করার জন্য সরকারের দিকে আহ্বান জানান। এর মধ্যে রয়েছে অর্থায়ন প্রদান, নিয়ামক বাধাগুলি কমানো এবং সীমান্ত প্রযুক্তির জন্য একটি উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা।
এদিকে, স্টার্টআপ সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য মনে করেন যে, সরকারকে ভোক্তা প্রযুক্তির প্রতি অবজ্ঞাসূচক মনোভাব গ্রহণ করা উচিত নয়। বরং, নীতি-নির্ধারকদের এটি স্বীকার করা উচিত যে, ভোক্তা প্রযুক্তি বিস্তৃত প্রযুক্তিগত পরিবেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
টিভি মোহনদাস পই, ইনফোসিসের প্রাক্তন বোর্ড সদস্য এবং এয়ারিন ক্যাপিটালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, সরকারের স্টার্টআপদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে একাধিক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষত পই উল্লেখ করেছেন যে, অ্যাঞ্জেল ট্যাক্সের মতো সমস্যাগুলি প্রাথমিক পর্যায়ের স্টার্টআপগুলির জন্য সমস্যা তৈরি করেছে, এবং বীমা কোম্পানি এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিনিয়োগের বিষয়ে কঠোর নীতির কারণে বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। পই-এর মতে, এই নীতিগুলি উদ্ভাবনে বাধা সৃষ্টি করে এবং উচ্চ ঝুঁকির খাতে বিশেষত ডীপটেকের মতো ক্ষেত্রে বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে।
উপসংহার: উদ্ভাবনের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি
ভারতের স্টার্টআপ বাস্তুতন্ত্রে ডীপটেক এবং ভোক্তা প্রযুক্তির মধ্যে চলমান বিতর্ক একটি আরও ভারসাম্যপূর্ণ এবং সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। যদিও ডীপটেক নিঃসন্দেহে একটি বিশাল সম্ভাবনার ক্ষেত্র, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, ভোক্তা প্রযুক্তি কোম্পানিরও অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে, চাকরি সৃষ্টি করতে এবং ভবিষ্যত উদ্ভাবনের জন্য ভিত্তি তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তা স্বীকার করা উচিত।
এই দুই খাতের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি করার পরিবর্তে, ভারতের স্টার্ট
0 Comments