Binance এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি কীভাবে ভারতের ক্রিপ্টো প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়ছে: ডিজিটাল নিরাপত্তার একটি নতুন যুগ

Binance এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি কীভাবে ভারতের ক্রিপ্টো প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়ছে: ডিজিটাল নিরাপত্তার একটি নতুন যুগ

ভারতে ক্রিপ্টো প্রতারণা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এর পেছনে আছে উন্নত সুরক্ষা প্রযুক্তি এবং Binance-এর মতো প্ল্যাটফর্ম ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে নজিরবিহীন সহযোগিতা।

ক্রিপ্টো প্রতারণার রূপ পরিবর্তন

অভিজ্ঞ ক্রিপ্টো ব্যবহারকারীদের কাছে প্রতারণা চেনা সহজ—ফিশিং লিঙ্ক, সন্দেহজনক টোকেন, বা অচেনা DM। কিন্তু আজকের স্ক্যামাররা বৈধতার মুখোশ পরে, বিশ্বাসযোগ্য গল্প গড়ে তোলে, আর ডিজিটাল ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়। ফলে প্রতারণা শনাক্ত করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভুয়া গেমিং অ্যাপ থেকে শুরু করে ভুয়া সবুজ শক্তি প্রকল্প পর্যন্ত, স্ক্যামগুলো দিন দিন পরিশীলিত হচ্ছে। তবে Binance এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সক্রিয় পদক্ষেপ পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।

E-Nugget স্ক্যাম: যখন গেমিং হয়ে ওঠে দুঃস্বপ্ন

২০২১ সালে E-Nugget নামের একটি ঝলমলে গেমিং অ্যাপ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বড় লাভের। হাজার হাজার ব্যবহারকারী ‘সাইড হ্যাসল’ এর আশায় এতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত পঞ্জি স্কিম, যেটি পরিচালনা করছিলেন আমির খান ও তার সহযোগীরা।

অ্যাপটি হঠাৎ উধাও হয়ে যায়, সঙ্গে হারিয়ে যায় ব্যবহারকারীদের টাকা। তখনই Enforcement Directorate (ED) এবং Binance-এর Financial Intelligence Unit (FIU) একসঙ্গে কাজ শুরু করে। তারা প্রায় $6 মিলিয়ন সমমূল্যের ৪২টি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে এবং কেসটির গোঁড়ায় পৌঁছায়।

“ED-র সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে আমরা একটি বড় প্রতারণা বন্ধ করেছি,” — Jarek Jakubcek, Head of Law Enforcement Training, Binance

Fiewin ফ্রড: মাঙ্গালোর থেকে ৪০০ কোটি টাকার ধাক্কা

২০২৪ সালে মাঙ্গালোর-ভিত্তিক Fiewin গেমিং অ্যাপ ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করেছিল সহজ গেম ও তাৎক্ষণিক পুরস্কারের মাধ্যমে। কিন্তু যখন জেতার পরিমাণ বাড়তে থাকে, তখন তোলার অপশন বন্ধ হয়ে যায়।

একসময় এটি একটি বিশাল ৪০০ কোটি টাকার ($৪৮ মিলিয়ন) স্ক্যাম হিসেবে সামনে আসে। অপরাধীরা ব্যবহার করেছিল ক্রিপ্টো ওয়ালেট, ভুয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং নেটওয়ার্ক।

Binance-এর তদন্তে সহায়তায় ED ডিজিটাল ট্রেল অনুসরণ করে একাধিক গ্রেফতার করে।

“Binance-এর টিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে,” — এক ED কর্মকর্তা

Green Energy Scam: দেশপ্রেমের মোড়কে প্রতারণা

অক্টোবর ২০২৪-এ, M/s Goldcoat Solar নামক একটি কোম্পানি নিজেদেরকে সরকার-সমর্থিত নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্প হিসেবে তুলে ধরে। তারা দাবি করে যে ভারতকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫০ GW সৌর শক্তি লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় দেশপ্রেমের মোড়কে প্রচার চালিয়ে তারা অনেক বিনিয়োগকারীকে প্রতারিত করে। প্রতারকরা ভুয়া SIM কার্ড ব্যবহার করেছিল, যেগুলোর জন্য চুরি করা পরিচয় ব্যবহার করা হয়েছিল এবং বিদেশে পাঠানো হয়েছিল।

Binance-এর সহায়তায় দিল্লি পুলিশ এই প্রতারণা উদঘাটন করে। ১ লক্ষ USDT-এর বেশি ক্রিপ্টো বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং গ্রেফতার হয়।

“জটিল আর্থিক তদন্তে আমরা সময়মতো সহায়তা করি,” — Jakubcek

ক্রিপ্টো অপরাধ কমছে: ইতিবাচক পরিবর্তন

Chainalysis 2025 Crypto Crime Report অনুসারে:

• ২০২৪ সালে অবৈধ ক্রিপ্টো ওয়ালেটে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে $৪০.৯ বিলিয়ন

• অবৈধ লেনদেনের হার ২০২৩ সালের ০.৬১% থেকে ২০২৪ সালে কমে ০.১৪%-এ নেমে এসেছে

এটি একটি পরিণত ইকোসিস্টেমের ইঙ্গিত দেয় যেখানে প্ল্যাটফর্ম, ব্যবহারকারী, রেগুলেটর এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মিলেই ডিজিটাল ফিনান্সকে নিরাপদ করে তুলছে।

Binance-এর ভূমিকা: নিরাপদ ক্রিপ্টো ভবিষ্যতের দিশারী

২০২৪ সালে Binance নিচের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে:

• Risk Sniper Channel on Binance Square: ৫০+ AI মডেল চালিত সতর্কবার্তা ব্যবস্থা, যা উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ঠিকানা ও ফিশিং লিঙ্ক শনাক্ত করে।

• $9.1 মিলিয়ন চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার।

• ৪৭,০০০+ ক্ষতিকারক ঠিকানা ব্ল্যাকলিস্ট।

• হ্যাক ও এক্সপ্লয়েট থেকে $৮৮ মিলিয়ন পুনরুদ্ধার।

• ৬৪,৮০০+ আইন প্রয়োগকারী অনুরোধে সাড়া দিয়েছে।

• ১৪,৮০০-এর বেশি রেজিস্টার্ড কর্মকর্তাকে সহায়তা দিয়েছে।

• হংকংয়ের একটি অপরাধী চক্রের অপারেশন ব্যাহত করেছে এবং WEF-এর Cybercrime Atlas উদ্যোগে সহায়তা করেছে।

ব্যবহারকারীদের জন্য শিক্ষা: ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি

যদিও প্রতারকরা নতুন কৌশলে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে, তবুও ক্রিপ্টো কমিউনিটি এখন আরও শক্তিশালী টুলস, উন্নত আইন এবং ব্যবহারকারীদের সচেতনতা দিয়ে প্রতিরোধ করছে।

Binance প্রমাণ করেছে যে নিরাপত্তা এবং উদ্ভাবন একসঙ্গে চলতে পারে। তবে যুদ্ধ এখানেই শেষ নয়। AI-চালিত হুমকি শনাক্তকরণ, আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা এবং ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে আরও বিনিয়োগ দরকার।

পরবর্তীবার কেউ যদি “নিশ্চিত লাভ” বা “এক জীবনে একবারের সুযোগ” বলে প্রলোভন দেখায়, তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করুন: এর ফাঁদটা কী?

কারণ, ক্রিপ্টো দুনিয়ায় ঠিক প্রশ্নটা করলে শুধু টাকা নয়, আপনার পুরো ইনভেস্টমেন্ট বাঁচতে পারে।

ট্যাগস: #CryptoIndia #Binance #ScamPrevention #DigitalFinance #Web3Security #BlockchainNews #ক্রিপ্টোপ্রতারণা #বাংলাখবর